সময়ের মূল্য-সময় অমূল্য সম্পদ
সময়ের মূল্য-সময় অমূল্য সম্পদ
সময় অমূল্য সম্পদ। সময়ই মানুষের জীবন। সে কারোর জন্য অপেক্ষা করেনা। আর এই সময় শ্রোতের ন্যায় মানুষের জীবন থেকে চলে যায়। সময় বরফের ন্যায় বিন্দু বিন্দু করে মানুষের জীবন থেকে ক্ষয় হয়ে যায়। আর যে স্বীমিত সময়ে বরফের মূল্যায়ন করে সে ব্যাবসায় সফলতা অর্জন করে অর্থাৎ বরফ বিক্রেতা যদি তার বরফ বেশী দামে হাকায় স্বল্প দরে বিক্রি করেনা তবুও তার বরফ ক্ষয় হয়ে যাবে, বেশি মূল্যের জন্য অপেক্ষা করেনা। বরং এতে তার ক্ষতির অংশটাই বেশী। যতদূর সম্ভব তাড়াতাড়ি বিক্রি করে ফেলা তাতে তার মূল পুঁজিটা থাকতে পারে। এমনিভাবে সময়ের মূল্যায়ন না করলে সেও জীবন থেকে হাত ছাড়া হয়ে যাবে। আজ্ না কাল্ এমন করতে করতে জীবন থেকে ক্ষয় হয়ে যাবে। ঠিক যে সময়ের সঠিক মূল্যায়ন করে তারও জীবন অধিক দামী ও মূল্যবান হয়ে যাবে। যার দ্বারা সে মানুষের মাঝে ইজ্জত-সম্মান বেশী পায়। দুনিয়াতে যেমন পরম সুখ শান্তি পায় তদ্রæপ পরকালীন জীবন আখেরাতেও লাভ করে চিরস্থায়ী সফলতা ও ঈর্ষণীয় মর্যাদা। সময় মানুষের জীবন উন্নতির একমাত্র চাবিকাঠি। কারন যে সময়কে কাজে লাগাবে সে তার ফলাফল ভোগ করবে। যেমন কেউ যদি সময়কে ভালো কাজে লাগায় তার জীবন উন্নত এবং চরিত্র হবে সুন্দর। আর এর বিপরিত কাজে লাগালে জীবন হবে ব্যর্থ, চরিত্র হবে খারাপ এবং নিন্দনীয় যা সমাজের জন্য কলঙ্ক। আর এই সময় মানুষকে জান্নাতের সুউঁচ্চ আসনে সমাসীন করে। কারন আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদত করে জান্নাতের সুউঁচ্চ আসনে সমাসীন করার জন্য। তার প্রমাণ দিতে গিয়ে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনوَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ (الذاريات ৫৬)
অর্থাৎ আমি মানবজাতি ও জিন জাতিকে একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্যই সৃষ্টি করেছি।
মানুষ যদি তার খোদা প্রদত্ব বিধান পালন করে তাহলে সে উক্ত আসনে আদিষ্টিত হবে। পক্ষান্তরে যে ¯্রষ্টার লক্ষ্যের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে আল্লাহ তাকে জাহান্নামের অতল গহীরে নিক্ষেপ করেন। এরই প্রেক্ষিতে জীবনে একটি মুহূর্ত (সময়) নষ্ট করা মারত্মক ক্ষতি। কারন কাল কেয়ামতের ময়দানে যখন হিসাব-নিকাশ শুরু হবে মহান আল্লাহ তায়ালা যখন বিচার কার্যক্রম শেষ করবেন, এবং জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে আর জান্নাতিকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন তখন জান্নাতবাসীরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাবে। তাদের কোনো কিছুর আপসোস থাকবেনা। কিন্তু একটা জিনিষের অর্থাৎ ঐ সময়ের আপসোস থেকে যাবে যে সময়টা সে কোনো ধরণের আমল ছাড়া কাটিয়েছে। অর্থাৎ ঐসময় যে সময়টা সে না কোনো দুনিয়াবী কাজ বা না কোনো আখেরাতের নেক-আমলের কাজ করেছে। আর এজন্যই উক্ত সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে অনান্য নেয়ামতের তুলনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ নেয়ামত। আর সময় গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণে, এবং তার গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে মহান আল্লাহ তায়লা কুরআনে অনেক যায়গায় সময়ের কসম করেছেন। কখনো দিবা-রাত্রির, আবার কখনো সকালের, কখনোই বা চাশতের। তা ছাড়া গভীরভাবে লক্ষ করলে আমরা বুঝতে পারি যে, ইসলাম প্রতিটি কাজের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারন করে দিয়েছে। যেমন নামাজ, রোজা,হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি বড় বড় আহকামের অধিকাংশ বিষয় সমুহ সময়ের মালার সাথে গাঁথা। যেমন আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন
إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَوْقُوتًا (النساء ১০৩ )
নিশ্চয় নামাজ মুমিনের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে আদায়ের বিধান করা হয়েছে। অন্যত্রে আল্লাহ তায়ালা সময়ের কসম করে ইরশাদ করে বলেন
وَالْعَصْرِ (১) إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ (২)
অর্থাৎ সময়ের কসম.সমস্ত মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ।
সময়ের মর্যাদা, জীবনের গুরুত্ব,এর অনুভূতি ও গঠনমূলক জীবন গড়ার প্রতি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন সময়ে বিচিত্রময় দৃষ্টিভঙ্গি পেশ করেন। যেমন তিনি ইরশাদ করেন
من حسن إسلام المرأ تركه مالايعنيه
অর্থাৎ মানুষের ইসলামের সৌন্দর্যের মধ্যে হতে অনর্থক কাজ ছেড়ে দেয়া।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের জীবনে পাঁচটা জিনিষের গুরুত্ব দেয়ার প্রতি উৎসাহ করে ইরশাদ করেন।
عَنْ، عَمْرِو بْنِ مَيْمُونٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِرَجُلٍ: " اغْتَنِمْ خَمْسًا قَبْلَ خَمْسٍ: حَيَاتَكَ قَبْلَ مَوْتِكَ , وَفَرَاغَكَ قَبْلَ شَغْلِكَ , وَغِنَاكَ قَبْلَ فَقْرِكَ , وَشَبَابَكَ قَبْلَ هَرَمِكَ , وَصِحَّتَكَ قَبْلَ سَقَمِكَ " (مصنف ابن ابي شيبة ৩৪৩১৯)
অর্থাৎ আমর ইবনে মায়মুন রা. রাসুল সা. থেকে এই ইরশাদ বর্ণনা করেন যে,পাঁচ জিনিষ আসার পূর্বে পাঁচ জিনিষের মূল্যায়ন করো। যথা-জীবনকে (হায়াত) মৃত্যুর পূর্বে, অবসরতাকে ব্যাস্ততার পূর্বে, ধনাট্রতাকে দারিদ্রতার পূর্বে, যৌবনকে বার্ধ্যক্যের পূর্বে, সুস্থতাকে অসুস্থতার পূর্বে।
অন্যত্রে আরো ইরশাদ করেন
عن أبي برزة الأسلمي، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: لا تزول قدما عبد يوم القيامة حتى يسأل عن عمره فيما أفناه، وعن علمه فيم فعل، وعن ماله من أين اكتسبه وفيم أنفقه، وعن جسمه فيم أبلاه. (سنن الترمذي ২৪১৭)
অর্থাৎ কেয়ামতের দিন কোনো বান্দা চারটি প্রশ্নের উত্তর না দেয়া পর্যন্ত সামনে এক কদম ও যেতে পারবে না। যথা- সে তার জীবন কোন্ কাজে ব্যয় করেছে, তার অর্জিত জ্ঞান অনুযায়ী সে আমল করেছে কি না, তার সম্পদ কোথায় থেকে আয় করে কোথায় ব্যয় করেছে, এবং তার যৌবনকাল কোথায় ক্ষয় করেছে।
সুতরাং যারা সময়ের মূল্য দিয়েছে তাদের জীবন আনেক দামী হয়ে গেছে। আমরা আমাদের পূর্বসূরীর দিকে তাকালে বুঝতে পারি তারা সময়ের যথার্থ কদর করেছেন তাই তাদেরকে আজও আমরা বিভিন্ন কেত্রে উপমা হিসেবে পেশ করে থাকি। যেমন দুজন ব্যক্তির ঘটনা নিম্মে উল্লেখ করা হলো যারা সময়কে মূল্যায়ন করার কারনে আমাদের চির স্মরণীয়।
দাউদ তায়ী রহ. তিনি রুটির পরিবর্তে ছাতু খেতেন এর কারন জিঙ্গাসা করা হলে তিনি বলেন রুটি চিবানো ও ছাতু খাওয়ার মধ্যে এই পরিমান সময়ের ব্যাবধান যার মধ্যে প্রায় ৫০ টি আয়াত তেলোয়াত করা যায়। জনৈক ব্যাক্তি সময়ের গুরুত্ব ও ইলমের মুজাহাদা করতে গিয়ে দীর্ঘ ৪০ বছর যাবৎ কখনো নিজ হাতে খানা খাননি। তার আপন বোন তার জন্য খানা পাক করে নিজ হাতে লোকমা ধরে তাকে খাইয়ে দিতেন। এরাই আমাদের আকাবীর, এরাই মোদের পূর্ব পুরুষ । তাইতো কবি বলেন
اولئك آبائي فجئني بمثلهم+إذاجمعتنايا جرير المجامع
অর্থাৎ ওরাই মোদের পূর্ব পুরুষ যাদের নিয়ে গর্ব করি হে জারির! লওতো দেখি তাদের মতো একটা ঝুড়ি।
তাই তো সময়ের ব্যাপারে অনেক প্রবাদ মনিষীদের থেকে বর্ণিত আছে।
الوقت هو الحياة فلاتقتلوه، الوقت أثمن من الذهب والفضة،
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সময়ের সঠিক মর্ম বুঝে আকাবীরদের তরীকায় আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন
.হযরত মাওলানা মুফতি নুরুল আবছার
উস্তাদ:
আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া ইদারাতুল উলূম ঢাকা
আফতাবনগর মসজিদ মাদরাসা কমপ্লেক্স,
মেরুল বাড্ডা ঢাকা।
সুন্দর
উত্তরমুছুন