রোযা কাদের উপর ফরজ
রোযা কাদের উপর ফরজ
পাগল ও নাবালেগ ব্যতীত রমজান শরীফের রোযা সকল মানুষের উপর ফরজ। শরীয়ত সমর্থিত কোন ওযর-আপত্তি ব্যতীত রমজান শরীফের রোযা পরিত্যাগ করা জায়েয নেই। এমনিভাবে কেউ রোযা মান্নত মানলে, সে রোযাও তার উপর ফরজ হয়ে যাবে এবং ক্বাযা ও কাফ্ফারার রোযাও ফরজ। এছাড়া অন্য যত রোযা রয়েছে তা সব নফল। নফল রোযা রাখলে সওয়াব পাওয়া যায়, না রাখলে কোন গোনাহ হয় না। দুই ঈদের দুই দিন, কুরবাণী ঈদের পরে তিন দিন-বছরে এ পাঁচ দিন রোযা রাখা হারাম।
রোযার জন্য মুখে নিয়ত বলা জরুরী নয়, বরং শুধু মনে মনে এ খেয়াল করে সংকল্প করবে যে ‘আমি আজকে আল্লাহর নামে রোযা রাখব এবং কোন কিছু পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকব’, তাহলেই রোযা হয়ে যাবে। অবশ্য যদি কেউ মনে মনে সংকল্প করার সাথে সাথে মুখেও বলে নেয় যে ‘হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল আপনার নামে রোযা রাখব’ তাতেও ক্ষতি নেই।
সুবহে সাদেক থেকে রোযা শুরু হয়, সুতরাং সুবহে সাদেকের পূর্ব পর্যন্ত পানাহার, স্ত্রী সহবাস ইত্যাদি সব জায়েয আছে। অনেক শেষ রাত্রে সাহরী খাওয়ার পর রোযার নিয়ত করে শুয়ে পড়ে এবং মনে করে নিয়ত করে নেওয়ার পর সময় থাকা সত্তে¡ও পানাহার কিংবা স্ত্রী সহবাস জায়েয নেই-এ ধারণা ভুল বরং সুবহে সাদেকের পূর্ব পর্যন্ত সব কিছু জায়েয আছে, নিয়ত করুক চাই না করুক।
রামাজানের রোযা
রামাজানের রোযার নিয়ত যদি রাত্র হতেই করে নেয়, তাহলেও ফরজ আদায় হয়ে যায়। যদি রাত্রে রোযার নিয়ত না থাকে এমনকি ভোর হওয়া পর্যন্ত এ খেয়াল থাকে যে, আজকে আমি রোযা রাখব না, অতঃপর বেলা বাড়লে খেয়াল হয় যে, ফরজ রোযা ছেড়ে দেওয়াটা অন্যায়। এ খেয়াল করে রোযার নিয়ত করে নেয়, তবুও রোযা হয়ে যাবে। কিন্তু যদি সকাল বেলা কোন কিছু খেয়ে থাকে বা পান করে থাকে, তাহলে এখন আর নিয়ত করতে পারবে না।
যদি কোন কিছু পানাহার না করে থাকে, তাহলে দিনের দ্বিপ্রহরের এক ঘন্টা পূর্ব পর্যন্ত রামাজানের রোযার নিয়ত করা জায়েয আছে।
রামাজান শরীফের রোযায় শুধু এতটুকু নিয়ত করে নেওয়াই যথেষ্ট যে, আজকে আমি রোযা রাখব, অথবা রাত্রে মনে মনে বলে যে, আগামীকাল আমি রোযা রাখব। ব্যাস! এতটুকু নিয়তেই রামাজানের রোযা আদায় হয়ে যাবে। ‘রমজানের রোযা রাখছি’ বা ‘ফরজ রোযা রাখছি’ ইত্যাদি নিয়তে উল্লেখ করা কোন জরুরী বিষয় নয়।
রোযার নিয়ত
নাওয়াইতু আন আসূমা গাদাম মিন শাহরি রামাদানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু ফাতাক্বাব্বাল মিন্নী ইন্নাকা আনতাস সামী ‘উল‘আলীম।
শা‘বানের ২৯ তারিখ সন্ধ্যায় যদি রামাযান শরীফের চাঁদ দেখা যায়, তাহলে পরের দিন রোযা রাখবে। যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে এবং চাঁদ দেখা না যায়, তাহলে পরের দিন রোযা রাখবে না। হাদীস শরীফে এরূপ সন্দেহের দিনে রোযা রাখার প্রতি নিষেধাজ্ঞা এসেছে, বরং শা‘বানের ত্রিশ দিন পূর্ণ হওয়ার পর রোযা রাখতে বলা হয়েছে।
শা‘বানের ২৯ তারিখে মেঘের কারণে যদি চাঁদ দেখা না যায়, তাহলে পরের দিন নফল রোযা রাখাও নিষেধ। তবে যদি কেউ সর্বদা বৃহস্পতিবার, শুক্রবার বা অন্য কোন দিন নির্দিষ্ট দিনে নফল রোযা রাখার অভ্যস্ত হয় এবং ঘটনাক্রমে তার নির্দিষ্ট তারিখটি ঐ দিন হয়, তাহলে নফলের নিয়তে রোযা রাখা ভাল। তারপর যদি কোথাও থেকে খবর আসে যে, ঐ দিন রামাজানের ১লা তারিখ প্রমাণিত হয়েছে, তাহলে তার সে নফল রোযা দ্বারাই ফরজ আদায় হয়ে যাবে, ক্বাযা করার প্রয়োজন নেই।
আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকার দরুন যদি ২৯ তারিখে রামাযানের চাঁদ দেখা না যায়, তাহলে পরের দিন দ্বিপ্রহরের এক ঘন্টা পূর্ব পর্যন্ত কোন কিছু পানাহার করবেন না। যদি কোথাও থেকে চাঁদ দেখার সংবাদ আসে, তাহলে তখনই রোযার নিয়ত করে নিবে,আর যদি সংবাদ না পাওয়া যায়, তাহলে পানাহার করবে।

কোন মন্তব্য নেই